SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Academy

বয়ঃসন্ধিক্ষণে কোন পরিবর্তনের জন্য শক্তি বেশি ক্ষয় হয়?

Created: 8 months ago | Updated: 8 months ago

পাঠ ১ - বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন

১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর বয়সকে কৈশোরকাল বলা হয়। এই কৈশোর কালেরই অপর নাম
বয়ঃসন্ধিকাল। বয়ঃসন্ধিকাল দ্রুত পরিবর্তনের সময়। এ সময়ের শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন যৌনাঙ্গের পরিবর্তন। অন্যান্য সকল পরিবর্তনের মতো যৌন
পরিবর্তনও এক ধরনের বিকাশ। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি শিশু পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত হয়। এই
পরিবর্তনের ধরন ও কারণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে অনেক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, মনটা
সবসময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। তাই বয়ঃসম্প্রিক্ষণ বয়সটিকে ঝড়-ঝঞ্ঝার বয়স বলে মনে করা হয়।


বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা কেন জানব?

-এ বয়সের শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানলে আমাদের পূর্ব-প্রস্তুতি থাকবে।

-সহজভাবে পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারব এবং পরিবর্তন সম্পর্কে কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না।

-পরিবারে ছোট ভাই বা বোনকে পূর্ব-প্রস্তুতি দিতে পারব।

-কৈশোরের যে কোনো ছেলেমেয়েকে পরিবর্তন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারব।

-অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করতে পারব।

-পরিবারের বড়দের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারব।

-সহজেই পরিবার ও সমাজের সাথে খাপ খাওয়াতে পারব।

১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর বয়সকে আমরা কৈশোরকাল বলি। কৈশোরকালেরই অন্য একটি নাম
বয়ঃসন্ধিকাল। তবে কৈশোরকালের প্রথমদিক অর্থাৎ ১০/১১ থেকে ১৪/১৫ বছর সময়টাই বয়ঃসন্ধিকাল
হিসাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বয়ঃসন্ধিতে দেহের আকার-আকৃতির পরিবর্তন হয়। ছেলেমেয়েদের উচ্চতা ও ওজন
দ্রুত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধিতে তারা পূর্ণবয়স্কের রূপ ধারণ করে। এ সময়ে
ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন শুরু হয় ।

যে সব ছেলে-মেয়েদের নির্দিষ্ট বয়সের অনেক আগে এ পরিবর্তন শুরু হয়, তাদের অকাল পরিপক্ক (Early
Mature) বলা যায়। আর যাদের নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছু পরে এ পরিবর্তন শুরু হয়, তাদের বিলম্বিত

৩৪

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান

পরিপক্ক (Late Mature) ছেলে বা মেয়ে বলা হয়। তাড়াতাড়ি পরিবর্তন বা দেরিতে পরিবর্তন- কোনোটিই
দুশ্চিন্তার কোনো বিষয় নয়। বংশগত কারণ, আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে এই পরিবর্তনের সময়কাল
একেক জনের একেকরকম হয়। অপুষ্টির কারণেও পরিবর্তন দেরিতে আসতে পারে।

পাঠ ২ – বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনের কারণ

তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনের কারণ কী? কেনইবা হঠাৎ করে ১০/১১ বছর
বয়সে এই পরিবর্তন শুরু হয়? হ্যাঁ, এখন আমরা বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জানব। বয়ঃসন্ধির
পরিবর্তনের জন্য দায়ী আমাদের দেহে উৎপন্ন কিছু রাসায়নিক পদার্থ যা হরমোন নামে পরিচিত।

হরমোন কী?

মানুষের দেহে কতকগুলো বিশেষ গ্রন্থি থাকে। গ্রন্থি হলো একগুচ্ছ কোষ যা বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ
নিঃসরণ করে। এই সব রাসায়নিক পদার্থ স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় এবং সরাসরি রক্তে
মিশে যায়। এই হরমোন রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, দেহের অনেক
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটায় এবং দেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জৈব রাসায়নিক
পদার্থই হলো হরমোন। হরমোন নিঃসরণ কম বা বেশি হলে বিকাশের ধারা বিঘ্নিত হয়। মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি
নিয়ন্ত্রণ করে যে হরমোন, তার নাম গ্রোথ হরমোন। এ হরমোন যতদিন নিঃসরিত হয়, ততদিন মানুষ লম্বা
হয়, বিভিন্ন অস্থি সুগঠিত হয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়।
বলে মানুষের বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের সকলের মস্তিষ্কের তলদেশে পিটুইটারি নামক গ্রন্থি
অবস্থিত। বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গোনাডোট্রপিক হরমোন
নিঃসৃত হয়। এ হরমোন ছেলেদের শুক্রাশয়ের বৃদ্ধি ঘটায়। তখন শুক্রাশয় থেকে ক্ষরিত হয় টেস্টোস্টেরন
হরমোন।

এই টেস্টোস্টেরন হরমোন ছেলেদের বিভিন্ন
পরিবর্তনে দায়ী প্রধান হরমোন যা দ্বারা ছেলেদের
শুক্রাণু তৈরি হয় এবং গোঁফ, দাড়ি ও শরীরের
বিভিন্ন স্থানে লোম গজায়।

মেয়েদের দেহে গোনাডোট্রপিক হরমোনের ক্ষরণ
ডিম্বাশয়কে পূর্ণতা দেয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে
ক্ষরিত হয় ইস্ট্রোজেন। এই হরমোনের কারণে
মেয়েদের ঋতুস্রাবসহ শারীরিক ও মানসিক
বিভিন্ন পরিবর্তন হয়।

দেহের আকৃতি যতদিন অপরিণত থাকে অর্থাৎ শিশুর মতো থাকে ততদিন ছেলেমেয়েরা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি
আকর্ষণ অনুভব করে না। কিন্তু মাধ্যমিক বা গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য অর্জন শুরুর পর বিপরীত লিঙ্গের প্রতি
আকর্ষণ অনুভব করে। তোমরা এখন বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে বা মেয়ে। এ বয়সের পরিবর্তন সম্পর্কে
তোমাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। এ বয়সের যেসব ছেলে-মেয়ে তাদের দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা, প্রশ্ন ইত্যাদি
নির্ভরযোগ্য কারও কাছে প্রকাশ করতে পারে, তাদের আচরণ কম বিঘ্নিত হয়।

 

পাঠ ৩ বয়ঃসন্ধিকালে পরিবারের সাথে খাপ খাওয়ানো

বয়ঃসন্ধিকালে পরিবারে বিশেষ করে বাবা-মার সাথে ছেলেমেয়েদের সম্পর্কের পরিবর্তন আসে। প্রায়ক্ষেত্রেই
এই সম্পর্ক অবনতির দিকে যায়। এ জন্য বাবা-মা এবং সন্তান উভয়পক্ষকেই দায়ী করা যেতে পারে। কীভাবে
পরিবারের সাথে সুন্দরভাবে খাপ খাওয়াতে হবে এ কৌশল শেখার আগে জেনে নেই, কেন এ ধরনের
সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।

মনোভাবের পার্থক্য: মা-বাবা ও বয়ঃসন্ধিক্ষণের সন্তানদের মনোভাবে অনেক পার্থক্য থাকে। যেমন-
মা-বাবা যে টিভি অনুষ্ঠান পছন্দ করেন, সন্তানদের তা ভালো লাগে না। বয়সের পার্থক্য, সামাজিক
বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য মনোভাবের পার্থক্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানরা মা-বাবাকে বর্তমান যুগের
অনুপোযুক্ত মনে করে। এ কারণে মা-বাবার নির্দেশকে প্রায়ই তারা অমান্য করে।

বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে চলতে পছন্দ করে। তাদের কোনো
কাজে বড়দের হস্তক্ষেপ তারা পছন্দ করে না। পরিবারের আরোপিত বিধিনিষেধের বিরোধিতা করে।
অনেক সময় মনে করা হয় যে তাদের প্রতি অন্যায়, অবিচার করা হচ্ছে। এজন্য তারা ক্ষুব্ধ হয়।

 শৈশবে আচরণে মেয়ে বা ছেলের পার্থক্য করা হয় না। অথচ বড় হওয়ার সাথে
সাথে মেয়েদেরকে মেয়েদের মতো আচরণ করার জন্যে চাপ দেওয়া হয়। এ অবস্থা মেনে নিতে মেয়েদের
কষ্ট হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে না ফেরা, একা কোথাও যেতে না দেওয়া বিপরীত লিঙ্গের সাথে
মেলামেশায় আপত্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো মতবিরোধ ঘটায়।

দায়িত্ব পালনে অনিহা-শারীরিক পরিবর্তনের জন্য বয়ঃসন্ধিক্ষণে ক্যালরি বা শক্তি ক্ষয় বেশি হয়।
কাজে অনিহা, যে কোনো কাজে বিরক্তি, পড়াশোনায় একঘেয়েমি ও ক্লান্তি আসতে পারে। এ সময়ে
মা-বাবা লেখাপড়ায় আরও বেশি সময় ব্যয় ও মনোযোগী হওয়ার উপর জোর দেন ও সবসময় সতক
করেন। এ নিয়ে সন্তানদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং মা-বাবার সাথে সন্তানদের দূরত্ব বাড়ে।

অর্থনৈতিক চাহিদা : বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েদের বন্ধুদের সাথে বেড়ানো, পোশাক পরিচ্ছদ কিংবা শিক্ষা
উপকরণের চাহিদা থাকে। অসচ্ছলতা বা যে কোনো কারণে পরিবার চাহিদা পূরণ করতে না পারলে বা না
চাইলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

বাবা মার সম্পর্ক-বাবা-মায়ের মধ্যে মতবিরোধ বা সুসম্পর্ক না থাকলে সন্তানের মধ্যেও অশান্তি বিরাজ করে।

সকল মা-বাবার মধ্যে সন্তানদের জন্য স্নেহ-ভালোবাসার কোনো ঘাটতি থাকে না। সন্তানদের মলিন মুখ,
কষ্ট, দুশ্চিন্তা তাদেরকেও কষ্ট দেয়। স্নেহ-মমতা প্রকাশের ভঙ্গি একেক বাবা-মায়ের একেকরকম হয়।
সবসময়ই মনে রাখা দরকার যে, বাবা-মায়ের সবরকম বিধি-নিষেধের উদ্দেশ্যই থাকে সন্তানদেরকে
সঠিকভাবে গড়ে তোলা।

অনেক সময় মা-বাবা সন্তানের চাহিদা বুঝতে পারেন না। সেক্ষেত্রে সন্তানদের উচিত মা-বাবার কাছে
চাহিদার কথা খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করা। শিক্ষা সংক্রান্ত চাহিদা যেমন- বইপত্র, অন্যান্য শিক্ষা সরঞ্জাম কী
কাজে লাগবে এবং কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা বাবা-মায়ের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা বা
তাদেরকে বুঝিয়ে বলা। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে কোনো অসুবিধা থাকলে বা শারীরিক কোনো সমস্যা
মা-বাবাকে খোলামেলা বললে পরিস্থিতির জটিলতা অনেক কম হয়।

তোমরা হয়তো ভাবতেই পার না যে, বাবা-মায়ের মতবিরোধ দূর করতে তোমরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পার।
কী করলে মা-বাবা খুশি হবেন, কিসে তাদের সম্পর্ক ভালো হবে এটির কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই।
তোমাকেই বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে বুঝতে হবে তোমাকে কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে হবে।

মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, কাজ করার দক্ষতা। যে কোনো পরিবেশে
খাপ খাওয়ানোর জন্য এসব সম্পদ আজীবন সাহায্য করে। বয়ঃসন্ধিক্ষণ বয়সটাই প্রয়োজনীয় দক্ষতা
অর্জনের উপযুক্ত সময়। ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে- এটা মনে রেখে এ সময়ে তোমাদের যা যা
করতে হবে-

-মা-বাবা ও অন্যান্য সদস্যদের যথাযোগ্য সম্মান ও ভালোবাসা দিতে হবে।

-স্কুলের পড়াশোনায় আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

-মা-বাবা যে দায়িত্ব দেন, তা মনোযোগের সাথে পালন করতে হবে।

-অপ্রয়োজনে ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত তোমাদের নিজেদেরই নিতে হবে।

-যে কোনো সমস্যায় বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

এভাবেই তোমাদের সাথে পরিবারের দন্দ্ব, মতবিরোধ দূর হবে, পরিবারের সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায়
থাকবে, পারিবারিক পরিবেশটাকে তোমার কাছে মনে হবে- অনেক আনন্দের, অনেক সুখের।

পাঠ ৪ - বয়ঃসন্ধিকালে সমাজের সাথে খাপ খাওয়ানো

পরিবারের বাইরে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই স্কুলে ও সমবয়সী দলে।

স্কুলের সাথে খাপ খাওয়ানো-তোমরা কি কখনো এভাবে ভেবে দেখেছ যে, স্কুলে তোমরা কতটা সময়
ব্যয় কর? জেনে রাখ, একটি শ্রেণিতে বছরে এক হাজারেরও বেশি ঘণ্টা তোমরা স্কুলে কাটাও। স্কুলের
পরিবেশে যদি ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো যায়, তবে পরবর্তী জীবনে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো সহজ হয়।
আবার, স্কুল জীবনের সফলতার উপর পরবর্তী জীবনের সফলতা অনেকখানি নির্ভর করে।

১২ বছর বয়সের মাহিয়াত। বাবার বদলির কারণে আজ প্রথম দিন নতুন স্কুলে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে সে
ভাবতে থাকে, ক্লাসের বন্ধুরা কেমন হবে? সকলে কি আমাকে পছন্দ করবে? আমি কি স্কুলের শিক্ষকের সব
প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব? মাহিয়াতের ভাবনা থেকে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করা যায় যে, স্কুলে আমাদের অনেক
কিছুর সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। যেমন- প্রত্যেক বিষয়ের পড়া, শিক্ষক, সহপাঠীর আচরণ, ক্লাস রুটিন
ইত্যাদি অনেক কিছু।

তোমরা একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পারবে যে, শিক্ষকরা সব ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে একরকম আচরণ করেন
না। যারা ভদ্র, বিনয়ী, ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের কথা শোনে, সেসব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকরা বেশি
প্রশংসা ও উৎসাহ প্রদান করেন। আর যারা স্কুলের নিয়ম ভঙ্গ করে, পড়াশুনায় অমনোযোগী, তাদেরকে
শিক্ষকরা পছন্দ করেন না। শিক্ষকের প্রশংসা ও উৎসাহ স্কুলের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ায়,
লেখাপড়ায় সফলতা দেয়। এ লক্ষ্যে তোমাদের যা যা করণীয়-

-ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের পাঠদান শোনা।

-যে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে শিক্ষকের কাছে বুঝে নেওয়া।

-শিক্ষকের প্রশ্নের স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর দেওয়া ।

-যথাসময়ে শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ সম্পন্ন করা।

-দলীয় কাজে নিজের দায়িত্ব বুঝে নেওয়া ও যথাযথভাবে তা পালন করা

-স্কুলের নিয়ম মেনে চলা।

-অসুস্থতার সময় ছাড়া নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকা।

মনে রাখবে, শিক্ষকের সহায়তা ও তোমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ দুটি মিলে তোমাদের শেখার কাজটি
অনেক বেশি সহজ ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে।

সহপাঠী, সমবয়সী দলের সাথে খাপ খাওয়ানো বলতে পার- সহপাঠী বা সমবয়সী দলের মধ্যে কেন একজন
সবার প্রিয় হয়, আবার কেনইবা একজনকে সবাই পছন্দ করে না, দূরে ঠেলে দেয়? এই কারণগুলো আমাদের
জানা দরকার। সমবয়সীদের কাছে জনপ্রিয় হতে হলে কয়েকটি আচরণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে
হয়।

 

যারা যখন তখন কাউকে আঘাত করে, ঝগড়া মারামারি করে, কোনো ধরনের সহযোগিতা করে না, সমস্যা
তৈরি করে, খেলাধূলার সময় নিয়ম মানে না, মিথ্যা বলে তাদেরকে সবাই প্রত্যাখান করে।

স্কুলে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত যেসব কার্যক্রম চলে, সেগুলোতে অংশগ্রহণ করা জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম উপায়।
যেমন- খেলাধুলায় অংশ নেওয়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, গান, অভিনয়, বিতর্ক, কুইজ প্রতিযোগিতা করা,
বিজ্ঞান মেলা, প্রদর্শনীতে দলের সক্রিয় সদস্য হওয়া ইত্যাদি।

স্কুল, সহপাঠী ও সমবয়সী দলের সাথে খাপ খাওয়ানো ছাড়াও আত্মীয়-যজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে
সুসম্পর্ক বজায় রাখা বয়ঃসন্ধিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আত্মীয়ফজনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা, বয়স্ক
আত্মীয়দের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া, প্রতিবেশীদের সাথে দেখা হলে কুশল বিনিময় করা,
সকলের বিপদের মুহূর্তে এগিয়ে আসা ইত্যাদি কাজের মধ্য দিয়ে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যায়।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. আমাদের সকলের মস্তিষ্কের তলদেশে কোন গ্রন্থি অবস্থিত?

ক. থাইরয়েড গ্রন্থি

খ. পিটুইটারি গ্রন্থি

গ. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি

ঘ. শুক্রাশয় গ্রন্থি

২. বয়ঃসন্ধিক্ষণে কোন ধরনের পরিবর্তনের জন্য শক্তি বেশি ক্ষয় হয়?

ক. দৈহিক বৃদ্ধি

খ. মনোভাবের তারতম্য

গ. বন্ধুত্বের আধিক্য

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর পাও

ঘ. কঠোর শাসন

১৫ বছরের কণা প্রায়ই সন্ধ্যার পর বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যায়। আজ এ বন্ধুর জন্মদিন, কাল ও বন্ধুর
জন্মদিন লেগেই আছে। তাঁর স্বাধীন চলাফেরা বাবা-মা মেনে নেন না। প্রায়ই তাকে এ বিষয়ে বকাঝকা
করেন এবং কণার উপর ক্ষুব্ধ হন।

৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত কণার এই আচরণের কারণ-

ক. বাবা মার অধিক খেয়াল

গ. বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত মেলামেশা

৪. উপরোক্ত পরিস্থিতিতে কণার-

খ. স্বাধীনভাবে চলাফেরা

ঘ. সুনির্দিষ্ট বয়সে মানসিক পরিবর্তন

পরিবারের সাথে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে

ii. মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে

iii. শারীরিক দক্ষতা হ্রাস পেতে পারে

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i७॥

গ. ii ও iii

খ. i ও iii

ঘ. i, ii ও ইইই

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. জয়া ও রিমি ১৪ বছরের যমজ দুই বোন। তারা সবসময়ই টিভি দেখা, ঘুরে বেড়ানো, সাজগোজ ইত্যাদি
নিয়ে ব্যস্ত থাকে। লেখাপড়ায়ও তারা অমনোযোগী। মেয়েদের এই পরিবর্তন মা কিছুতেই মেনে নেন
না। আবার তিনি মেয়েদের সাথে সকল কথা খোলাখুলিভাবে প্রকাশও করেন না।

ক. কোন বয়সকে আমরা কৈশোর কাল বলে থাকি?

খ. হরমোন নিঃসরণ যথাযথভাবে না হলে কী হয়?

গ. জয়া ও রিমির সমস্যার কারণ উল্লেখ করে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. জয়া ও রিমির মায়ের ভূমিকা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে কি? উদ্দীপকের
আলোকে বিশ্লেষণ কর।

২. ১০ম শ্রেণির জাভেদের ২ বছরের ছোট বোন কণা। ছোট থেকে দুই ভাই-বোন এক সঙ্গে বড় হচ্ছে,
খেলছে, বেড়াচ্ছে। কিছুদিন ধরে বাবা-মা জাভেদের কিছু পরিবর্তন খেয়াল করেন। সে নিজেকে আড়াল
করে চুপি চুপি সেলুনে যায়। লুকিয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা দেখে। কণাও স্কার্ট, টপ এসব
পরতে চায়। সেও আগের মতো নেই। কণা চিত্র জগতের বই, বড়দের বই এসব থেকে বড়দের নানা
কিছু জানতে চেষ্টা করে। মা বিষয়টি খেয়াল করেন। তাদের এ পরিবর্তনগুলো বাবা-মা সহজ করে
বুঝিয়ে দেন। মা কণার বয়সের উপযোগী বই উপহার দেন।

ক. কৈশোর কালের অন্য একটি নাম কী?

খ. বয়ঃসন্ধিক্ষণ বয়সকে ঝড়-ঝঞ্চার বয়স বলা হয় কেন?

গ. জাভেদের মধ্যে কোন ধরনের পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. জাভেদ ও কণার সঙ্গে বাবা-মার সহজ সম্পর্ক ওদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সহায়ক
কথাটি বিশ্লেষণ কর।

Content added By

Related Question

View More